খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  খুলনার সাচিবুনিয়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় রাজিব টিকাদার নামের যুবক নিহত
  চট্টগ্রামে গ্রাহকের ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদসহ ৪৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা, সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ
  মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতনেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি

খু‌বিতে নিয়োগ, প‌দোন্ন‌তি ও নির্মাণ কা‌জে অ‌নিয়ম তদ‌ন্তে দুদ‌ক

হাসান হিমালয়

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত বছরের ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন। তার আগে তিন বছর দায়িত্বে থাকাকালে নিয়োগ, পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন দিয়েছেন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এসব প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে অধ্যাপক মাহমুদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে চার সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজের বিষয়েও পৃথক তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক সাইফুদ্দিন শাহ। ২০১২ সালের ১ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। পরে ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০২১ সালের ২৫ মে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি। অধ্যাপক মাহমুদের বাবা মোজাম্মেল হোসেন ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে ১৫ বছরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ হয়। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের নির্দেশেই দলীয় কর্মী ও তাদের স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য ও প্রভাবশালী কর্মকর্তারাও তাদের স্বজনদের নিয়োগ দিয়েছেন। এর বাইরে আগে নিয়োগ পাওয়া ছাত্রলীগ নেতারাও অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন নিয়েছেন।

দুদক সূত্র জানায়, হত্যা মামলায় সাজা পাওয়ার পরও অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক মুজিবুর রহমানকে পদোন্নতি দিয়েছেন সাবেক উপাচার্য মাহমুদ। উপাচার্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সঞ্জয় সাহাসহ অন্তত ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রকৌশলীকে অনিয়মের মাধ্যমে আপগ্রেডেশন দেওয়া হয়। তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতির নথি তলবের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক। দু-একর দিনের মধ্যে খুবিতে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হতে পারে।

এর বাইরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে প্রকৌশল শাখার কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান করছে দুদক। বিশেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান অ্যান্ড সন্সের পাওয়া কাজের প্রক্রিয়া খুঁজতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুবির কয়েক শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছরই উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান। তাঁর সময়েই চার শতাধিক নিয়োগ সম্পন্ন হয়। প্রতিটি নিয়োগেই অনিয়ম ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের ভবন নির্মাণে অনিয়মের ব্যাপারে ফায়েক উজ্জামানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ৪৫ শিক্ষক। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটিও ভবন নির্মাণে অনিয়ম পেয়েছিল। এসব নিয়ে অসংখ্য সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। অথচ তাঁকে বাদ দিয়ে মাত্র তিন বছর দায়িত্ব পালন করা উপাচার্যের অনিয়ম তদন্তের বিষয়টি সবাইকে অবাক করেছে।

এ বিষয়ে দুদক খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি কমিশন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেনের সময়কার অনিয়ম অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে। এর পর ২৪ ফেব্রুয়ারি চার সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানে অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামানের অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ পেলে সেটিও কমিশনকে জানানো হবে।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন বলেন, ইচ্ছে করলে কাউকে নিয়োগ বা পদোন্নতি দেওয়া যায় না। প্রতিটি নিয়োগেই কমিটি ছিল, তারা যাচাই-বাছাই করেছে, পরীক্ষা নিয়েছে, সব বিবেচনায় নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!